প্রতিনিধি, নাটোর:
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার গজেন্দ্র চাপিলা মৌজায় সরকারি জমিতে ৩৬ বছর ধরে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভানু রায় ও আকবর আলী নামের দুইটি পরিবারকে বিনা নোটিশে উচ্ছেদ করা হয়েছে। আদালতের এক আদেশের ভিত্তিতে গত ২৩ এপ্রিল তাদের চারটি ঘর, টয়লেট এবং টিউবওয়েল গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
উচ্ছেদের পর থেকে দুই পরিবারের নারী, শিশু, বৃদ্ধসহ ১৪ সদস্য রাস্তার পাশে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। কখনও খেয়ে, কখনও না খেয়ে দিন পার করছেন তারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উচ্ছেদের ঘটনায় সোভাজান নামের এক নারীর দায়ের করা মামলার রায়ের পরপরই স্থানীয় প্রশাসন তড়িঘড়ি করে ঘরবাড়ি ভেঙে ফেলে। তবে বাস্তুহারা পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন, তারা কোনো ধরনের নোটিশ বা আইনি প্রক্রিয়ার সুযোগ পাননি।
ঘটনার খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফাহমিদা আফরোজ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আমিনুর রশীদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তবে ইউএনও আদালতের আদেশ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
চাপিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুব রহমান জানান, জমিটি অর্পিত সম্পত্তি (ভিপি) হিসেবে গেজেটভুক্ত। সরকারিভাবে লিজ নিয়ে ভানু রায় ও আকবর আলীর পরিবার সেখানে বসবাস করছিলেন। উচ্ছেদের ঘটনায় শঙ্করী রানী গুরুদাসপুর থানায় সোভাজান বিবিসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
চাপিলা ইউনিয়ন ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, উক্ত জমির মূল মালিক ছিলেন সিংড়া উপজেলার কলম গ্রামের যোগেন্দ্র চন্দ্র বিশ্বাস। ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বের সময় তিনি ভারতে চলে গেলে জমিটি অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে রেকর্ডভুক্ত হয়। এরপর ১৯৮৯ সালে সরকার থেকে লিজ নিয়ে সেখানে বসতি গড়ে তোলেন ভানু রায় ও পরে আকবর আলী।
ভানু রায়ের ভাতিজা রূপ কুমার ও আকবর আলী বলেন, “আমরা ভূমিহীন। সরকারের দেওয়া লিজের জমিতে ৩৬ বছর ধরে বাস করছি। হঠাৎ করে আমাদের সবকিছু ভেঙে ফেলা হয়েছে। এখন খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছি।”
এ বিষয়ে মামলার বাদী পক্ষের দাবি, তারা আদালতের রায় পেয়েছেন, তবে নিষেধাজ্ঞার কারণে সাংবাদিকদের কাছে নথিপত্র তুলে ধরতে পারছেন না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলেন, “আদালতের কোনো আদেশ এখনো হাতে পাইনি। তবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহায়তা করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
সংরক্ষিত
Nazmul Islam 













